এলাকার স্কুলটি ঠিক করো: মিশেল ওবামা

mishel obama

মিশেল ওবামা—মার্কিন ফার্স্ট লেডি। জন্ম ১৯৬৪ সালের ১৭ জানুয়ারি। বোয়ি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে তিনি ২০১৩ সালের ১৭ মে এই বক্তৃতা দেন।

ধন্যবাদ! আজ এখানে তোমাদের সঙ্গে থাকতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত ও সম্মানিত বোধ করছি। তোমরা জানো না, আমরা সবাই তোমাদের নিয়ে কতটা গর্বিত। আমি জানি, তোমাদের এ যাত্রা সহজ ছিল না। এমন অনেক সময় এসেছে, যখন দ্বিধা আর হতাশার মধ্য দিয়ে তোমাদের যেতে হয়েছে।প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এ দেশের কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের শিক্ষা অবৈধ ছিল। কোনো ক্রীতদাস যদি পড়তে বা লিখতে গিয়ে ধরা পড়ত, তার শাস্তি ছিল অবর্ণনীয়। আর কেউ যদি তাদের লেখাপড়া শিখতে সাহায্য করত, সে কৃষ্ণাঙ্গ, শ্বেতাঙ্গ যা-ই হোক না কেন, তার কপালে জরিমানা বা জেল জুটত। কিন্তু তার পরও দাসপ্রথা বিলোপের দুই বছরের মাথায় এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শুধু আফ্রিকান-আমেরিকানদের শিক্ষিত করতেই নয়, বরং তাদের শেখাতে, কীভাবে অন্যদের শিক্ষিত করতে হয় এই হচ্ছে বোয়ি স্টেট ইউনিভার্সিটির ইতিহাস। আর আজ তোমরাও সেই ইতিহাসের অংশ হয়ে গেলে। এই গৌরবের সঙ্গে সঙ্গে তোমাদের কাঁধে অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও এসে পড়েছে। আজকে আমি তোমাদের সঙ্গে এটি নিয়েই কথা বলতে চাই। একটু পেছন ফিরে তাকালেই আমরা দেখব, যখন এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, এখানে কাদামাখা মেঝে আর ছিদ্রওয়ালা ছাদের কয়েকটি কাঠের কুঠুরির বেশি কিছু ছিল না। ব্ল্যাকবোর্ড, মানচিত্র এমনকি বইও ছিল বিলাসিতা! শিক্ষক আর শিক্ষার্থী—সবাইকেই অনবরত হুমকির মুখে থাকতে হতো। সেসব মানুষের জন্য শিক্ষা শুধু লিখতে আর পড়তে পারার চেয়ে অনেক বেশি কিছু ছিল। যেমনটি ফ্রেডরিক ডগলাস বলেছেন, ‘শিক্ষা মানে মুক্তি। এর মানে আলো আর স্বাধীনতা। এর মানে নিজের আত্মাকে সত্যের আলোয় আলোকিত করা, একমাত্র সে সত্যই মানুষকে মুক্তি দিতে পারে।’

সেই সময় মানুষ শিক্ষার জন্য ব্যাকুল ছিল। এ দেশে সফল হওয়ার জন্য যা দরকার ছিল, তার জন্য তাদের তীব্র আকাঙ্ক্ষা ছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ আকাঙ্ক্ষা কমে যায়নি, বরং বেড়েছে। শত বছর ধরে এ দেশে আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়ে যাওয়া মানুষগুলোর কথা ভেবে দেখো। থারগড মার্শাল ও মার্টিন লুথার কিং অনেক বাধা-বিপত্তি, হুমকি আর ষড়যন্ত্রের মধ্যেও আন্দোলন করে গেছেন। একবার রুবি ব্রিজেসের কথা ভেবে দেখো। কোনো শ্বেতাঙ্গ স্কুলে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ শিক্ষার্থী এই মেয়ের বয়স ছিল মাত্র ছয় বছর। তাকে ভর্তির প্রতিবাদে অন্য শ্বেতাঙ্গ মা-বাবারা তাঁদের সন্তানদের স্কুল থেকে ছাড়িয়ে নিয়েছিলেন। লোকজন রুবির পরিবারের পেছনে লেগেছিল। তার বাবা চাকরি হারিয়েছিলেন। সারা স্কুলে কেবল একজন শিক্ষক তাকে পড়াতে রাজি হয়েছিলেন। কিন্তু রুবির পরিবার পিছু হটেনি। একটি বছর ধরে ছোট্ট রুবি ক্লাসে একলা বসে লেখাপড়া চালিয়ে গিয়েছিল।

অসংখ্য মানুষ এ রকম ত্যাগ স্বীকার করেছেন, শিক্ষা লাভের জন্য কী তীব্র ইচ্ছাই না ছিল তাঁদের! শিক্ষা তাঁদের কাছে আক্ষরিক অর্থেই জীবন-মরণের ব্যাপার ছিল। কিন্তু আজকে যখন শিক্ষার কথা ওঠে, আমাদের তরুণ প্রজন্ম অতটা পাত্তা দেয় না। সেদিনের মতো আজ আর স্কুলে যাওয়ার জন্য কাউকে মাইলের পর মাইল হাঁটতে হয় না। তবু তারা স্কুলে না গিয়ে ঘরে সোফায় শুয়ে ভিডিও গেম খেলে বা টিভি দেখে। একজন শিক্ষক, আইনজীবী বা সফল ব্যবসায়ী হওয়ার বদলে তারা র‌্যাপ গায়ক হওয়ার স্বপ্ন দেখে।

পেশা হিসেবে যা-ই বেছে নাও না কেন, তোমাদের প্রত্যেকেই তরুণ প্রজন্মের জন্য পথপ্রদর্শক হিসেবে ভূমিকা রাখতে হবে। তোমার কোনো বন্ধু, আত্মীয় বা ভাইবোন যদি লেখাপড়াকে গুরুত্বের সঙ্গে না নেয়, তাদের ভুল ধারণা ভেঙে দাও। তাদের সঙ্গে কথা বলো। তাদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনো।

যদি তোমার এলাকার স্কুলটি ভালো না হয়, এটিকে মেনে নিয়ে বসে থেকো না। এটিকে ঠিক করো। অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলো। শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলো, এলাকার ব্যবসায়ী সম্প্রদায় আর নেতৃস্থানীয় মানুষকে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত করো। একটি স্কুলকে শিক্ষার্থীদের উপযোগী করে গড়ে তুলতে আমাদের সবার ভূমিকা আছে। আর যখন তোমাদের নিজেদের সন্তানের প্রসঙ্গ আসবে, তারা টিভিতে যা দেখবে, সেটি যদি ভালো কিছু না হয়, তাহলে টিভি বন্ধ করে দাও। তারা যে ভিডিও গেমটি খেলবে, সেটি যদি তোমার ভালো মনে না হয়, সেটি কেড়ে নাও। সাম্প্রতিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বাদ দিয়ে সারাক্ষণ সেলিব্রেটিদের গুজব প্রচারকারী গণমাধ্যমগুলোর বিরুদ্ধে অবস্থান নাও। যে সংস্কৃতি পরিশ্রম ও ধৈর্যের বদলে ক্ষণস্থায়ী সাফল্যকে বড় বলে শেখায়, তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও।

সোজা কথায়, আগামী প্রজন্মের জন্য একটি উদাহরণ হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলো, আর সুশিক্ষার শক্তি সম্পর্কে তাদের অবগত করতে নিজের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করো। কারণ, আমার আর আমার ভাইয়ের জন্য আমার মা-বাবা এটিই করেছেন। তাঁরা নিজেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারেননি। কিন্তু আমাদের এই সুযোগ দিতে তাঁরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন। আমার বাবা অসুস্থ শরীর নিয়েই প্রতিদিন নিয়ম করে চাকরিতে যেতেন, কিন্তু কোনো দিন তিনি এটি নিয়ে বিন্দুমাত্র অভিযোগ করেননি। একটিবারের জন্যও না। আমার ও আমার ভাইয়ের পড়াশোনার খরচের একটা বড় অংশ শিক্ষাঋণ আর অনুদান থেকে আসত, তার একটি ছোট্ট অংশ আমার বাবা পরিশোধ করতেন। অর্থের অভাবে আমরা রেজিস্ট্রেশন করতে পারব না, এমনটি ভাবাও বাবার জন্য অকল্পনীয় ছিল। আজ এমন একটি দিনও যায় না, যে দিনটিতে আমি আমার মা-বাবার এই ত্যাগের কথা মনে করি না। এমন একটি দিনও নেই, যে দিনটিতে তাঁদের এই দৃষ্টান্ত আমাকে নাড়া দেয় না।

আজকে আমি আমার মা-বাবার মতো আরও অসংখ্য মা-বাবার কথা ভাবছি, যাঁরা অতিরিক্ত কাজ করে, একটু বেশি পরিশ্রম করে তাঁদের সন্তানদের বেশি কিছু দিতে চেয়েছেন। তাঁদের এই ত্যাগের বিনিময়েই এসেছে তোমাদের অর্জন। নতুন প্রজন্মের জন্য এই আলোর মশাল বহন করার আর পথ দেখানোর দায়িত্ব তোমাদেরই। আমি তোমাদের সাফল্য কামনা করি।

যেকোনো বাধা জয় করা সম্ভব: কেট মিডলটন

ket

কেট মিডলটন ১৯৮২ সালের ৯ জানুয়ারি যুক্তরাজ্যের বার্কশায়ারে জন্মগ্রহণ করেন। ২০১১ সালের ২৯ এপ্রিল তিনি ব্রিটিশ রাজপুত্র প্রিন্স উইলিয়ামকে বিয়ে করেন। কেট ২০০৫ সালে স্কটল্যান্ডের সেন্ট অ্যান্ড্রুস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘হিস্ট্রি অব আর্ট’ বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ২০১৩ সালের ২৩ এপ্রিল ম্যানচেস্টারে অ্যাকশন অন অ্যাডিকশনের এক অনুষ্ঠানে এই বক্তব্য দেন।

সবাইকে ধন্যবাদ। এমন একটি অনুষ্ঠানে আমাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য আন্তরিক শুভেচ্ছা। আমাদের জীবনে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের দুর্যোগ দেখা দেয়। কখনো কখনো সেই দুর্যোগ আমরা নিজেরা সৃষ্টি করি। আমাদের সৃষ্ট সেই দুর্যোগে আমাদের পরিবার, সমাজ ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। মাদকাসক্তি মানুষের জীবনে এমনই একটি দুর্যোগের নাম। এই জটিল ও ভয়ানক সমস্যা শুধু একজন মানুষের জীবনকেই নষ্ট করে না, সঙ্গে তার পরিবার, বন্ধুদেরও বিপর্যস্ত করে তোলে। মাদকাসক্তি থেকে সহজেই পরিত্রাণ করা সম্ভব নয়। তার পরও পরিশ্রম, ধৈর্য ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এই খারাপ অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসা যায়। আমি আমার আশপাশে এমনই বেশ কজন মানুষকে চিনি, যাঁরা এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন। তাঁরা মাদকাসক্তি থেকে ফিরে এসেছেন স্বাভাবিক জীবনে। জয় করেছেন নতুন জীবনকে। আমি সত্যিই তাঁদের দেখে নিজেকে বেশ ভাগ্যবান বলে মনে করি। তাঁরা আমাকে বেশ উৎসাহ দেন। তাঁদের দেখে মনে হয়, যেকোনো বাধা জয় করা সম্ভব। মাদকাসক্তিকে পরাস্ত করা সম্ভব।

যাঁরা নেশার জগতে জড়িয়ে পড়েন, তাঁরা শুধু একা নিজের ক্ষতি করেন না। তাঁদের সন্তান, তাঁদের পরিবারও নেশার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নেশার কবলে ধ্বংস হয়ে যায় সেই পরিবার। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় সেই পরিবারের অবুঝ শিশুরা। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, যাঁরা মাদকে আসক্ত, তাঁদের চেয়েও তাঁদের পরিবারের সন্তানেরা সাত গুণ বেশি ঝুঁকিতে থাকে। নেশার প্রভাবে তাদেরও মানসিক সমস্যা, শারীরিক সমস্যা দেখা যায়। প্রচণ্ড মানসিক যন্ত্রণায় সর্বক্ষণ ভুগতে থাকে কোমলমতি সেই প্রাণগুলো। এই শিশুগুলো এমন একটি পরিবারে বড় হতে থাকে, যেখানে তারা সর্বদা ভয়, কোলাহল, ঝগড়া-বিবাদ দেখে দেখে বড় হয়। ছোটবেলা থেকেই তারা পরিবারের মাদকাসক্ত ব্যক্তির প্রভাবে অস্থির মানসিক অবস্থা নিয়ে বড় হতে থাকে, যা তাদের জন্য শুধুই নয়, সমাজের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ। সেই শিশুরা একসময় নিজেরাই মাদকের জগতে পা রাখে। রুক্ষ মেজাজ, রাগী স্বভাবের হয়ে ওঠে এই শিশুরা। গত বছর থেকে আমি এসব শিশুর জন্য কিছু করা যায় কি না, তা নিয়ে ভাবছিলাম। উইলিয়াম ও হ্যারির সঙ্গে আমি আমার চিন্তার কথা ভাগ করি। আমি শিশুদের জন্য কিছু করতে চাই বলে জানাই।

যেসব পরিবারে মাদকাসক্ত বা নেশাগ্রস্ত ব্যক্তি আছেন, তাঁদের পরিবারের সন্তানদের জন্য পরামর্শ দেওয়ার জন্য কাজ করা শুরু করি। পরিবারের শিশুদের যেন মানসিক ও শারীরিক ক্ষতি না দেখা দেয়, সে জন্য কী করা যায়, তার উপায় বের করি। সেই সব শিশু যেন নিজেরা মাদকাসক্তিতে জড়িয়ে না পড়ে, সেদিকে তাদের পরামর্শ দেওয়ার ব্যবস্থা নিই। শিশুরা যেন মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত না হয়, তার জন্য তাদের স্কুলেও পরামর্শ দেওয়ার চেষ্টা করি। শিশুর মাধ্যমে যেন তার পরিবারের সদস্যরা পরিবর্তিত হয়, সেদিকেও আমার খেয়াল আছে। শিশুরাই তো আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তাদের ভবিষ্যৎ যাতে নষ্ট না হয়, সেদিকে আমাদের সবার নিরন্তর খেয়াল রাখতে হবে। শিশুরা যেন মাদক ও নেশামুক্ত এক পৃথিবীতে বড় হয়ে উঠতে পারে, সে জন্য সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আমাদের সামান্য উদ্যোগ আমাদের আগামী দিনের নাগরিকদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে পারে।

মাদকাসক্তির চক্র থেকে বড়দের বেরিয়ে আসার জন্য অনেক সংগ্রাম করতে হয়। পরিবারের সদস্যদের ভূমিকা এখানে গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসকদের পরামর্শের মাধ্যমে ব্যক্তিকে অনেক কষ্ট করে নিজের ওপর ভরসা রেখে মাদককে জীবন থেকে দূরে ঝেড়ে ফেলতে হয়। শিশুদের মাদকে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি। শিশুরা সেই জীবনের প্রত্যাশা করে না। একটি সুন্দর, নির্মল পরিবার ও সমাজ প্রতিটি শিশু প্রত্যাশা করে। আমাদের সবার উচিত শিশুদের এই প্রত্যাশাকে বাস্তবে পরিণত করা।

সাফল্যের মূল মন্ত্র

আপনি যদি এই আবেগীয় বিষয়টি অনুশীলন না করেন তাহলে আপনার ব্যর্থ হবার সম্ভাবনাই বেশি।

কৃতজ্ঞতা জানান

একটি আবেগীয় বিষয় আপনার জীবনের সাফল্য নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আর তা হল কৃতজ্ঞতা। সব সময় কৃতজ্ঞতার অনুশীলন করলে সাফল্য পাওয়া সম্ভব। যাদের মধ্যে কৃতজ্ঞতা বোধ থাকে তারা তাদের জীবনের ভাল দিকগুলো সম্পর্কে অবগত থাকে। যেহেতু তারা তাদের সাফল্যের ফল ভোগ করে থাকে, তাই তারা অন্য ক্ষেত্রেও সাফল্য অর্জন করতে উদ্যোগী হয়। যাদের মধ্যে কৃতজ্ঞতাবোধ থাকে তারা যদি সাফল্য নাও পায়, তারা কিন্তু ঠিকই নিজেদেরকে সামলে নিতে পারে। অন্যদিকে, যাদের মধ্যে কৃতজ্ঞতাবোধ থাকে না, তারা কখনও সুখী হয় না, তারা কোন কাজ সম্পন্ন করলেও তৃপ্ত হয় না, তাদের কাছে সাফল্য হল তাদের দুর্বলতা ঢাকার একটি ধারাবাহিক প্রয়াস আর তাই তারা যদি কোন কিছুতে ব্যর্থ হয়, তখন তারা আরও তিক্ত হয়ে উঠে, রাগান্বিত হয়ে উঠে ও হতাশ হয়ে যায়। এজন্য যদি আপনি সফল হতে চান, তাহলে আপনার মধ্যে কৃতজ্ঞতাবোধ জাগ্রত করতে হবে। কৃতজ্ঞতাবোধ একটি মাংসপেশীর মত, আপনি যতই এটি ব্যবহার করবেন, এটি ততই শক্তিশালী হয়ে উঠবে।

রাতের অনুশীলন

ঘুমাতে যাওয়ার আগে কৃতজ্ঞতাবোধ অনুশীলন করা শ্রেয়। আপনার ট্যাবলেট পিসি বা মোবাইল বের করে তাতে ঐ দিনের ভাল কাজগুলো লিপিবদ্ধ করুন, যা আপনার ইতিবাচক আবেগকে প্রসারিত করেছে। আপনি যদি কাউকে সাহায্য করে থাকেন, তাহলে তা লিখে রাখুন। আপনি যদি কোন সহকর্মী বা বন্ধুর সাথে যোগাযোগ করে থাকেন, তাহলে তা লিখে রাখুন। আপনার কারণে যদি কারো মুখে হাসি ফুটে উঠে, তাহলে তা লিখে রাখুন। এতে আপনি আপনার মস্তিষ্ককে দিনের ইতিবাচক ঘটনাবলীর আলোকে প্রোগ্রাম করে নিতে পারবেন। যা কিছু ভাল হয়েছে আপনি তার উপরেই ফোকাস করবেন এবং যা কিছু ভাল হয়নি তা নিয়ে মাথা ঘামাবেন না। এর ফলে আপনি রাতে ভালভাবে ঘুমাতে পারবেন এবং পরের দিন নতুন উদ্যম নিয়ে ঘুম থেকে উঠে কাজ করতে পারবেন।

আপনার মস্তিষ্ককে রিপ্রোগ্রাম করা

রাতের অনুশীলনের ফলে আপনি কিন্তু আপনার মস্তিষ্ককে এমনভাবে প্রোগ্রাম করছেন যাতে আপনার মধ্যে জীবনের প্রতি আরো বেশি কৃতজ্ঞতাবোধ জাগ্রত হয়। আপনি পরে খেয়াল করে দেখবেন যে আপনার কোন একটি দিন খারাপ গেলেও ঐ দিনে কিন্তু কৃতজ্ঞতা বোধ করার মত অনেককিছুই পাবেন আপনি। আপনি যত দ্রুত এই অনুশীলনী আয়ত্ত করতে পারবেন, ততই ভাল। সময়ের সাথে সাথে আপনার ভেতর গড়ে উঠা কৃতজ্ঞতাবোধ শক্তিশালী হবে এবং আপনি আরো বেশি সাফল্য লাভ করতে পারবেন। তখন সাফল্য আপনার কাছে সুমিষ্ট হবে আর ব্যর্থতার তিক্ততাও কমে আসবে। আপনি অন্যদেরকে আরো বেশি করে ধন্যবাদ জানাবেন যা আপনার জন্য সুফল বয়ে আনবে। বিশ্বাস না হলে অন্তত এক সপ্তাহ এই অনুশীলনী চর্চা করে দেখুন, আপনি অবশ্যই এর সুফল পাবেনই।

বিল গেটস

CHINA MICROSOFT BILL GATES
সাফল্য যাকে আষ্টে-পৃষ্ঠে আবদ্ধ করে রাখে তেমনি একটি নাম বিল গেটস। অধ্যাবসায় এবং তপস্যা মানুষকে কি এনে দিতে পারে তা বিল গেটস শিখিয়েছেন আজকের তরুন প্রজন্মকে। যার দরুন আজকের শ্রেষ্ঠ ধনীর তকমাটা নিজের নামের সাথে মোটামুটি পাকাপোক্তভাবেই লাগিয়ে নিয়েছেন তিনি।

বিল গেটস এর পুরো নাম উইলিয়াম হেনরি গেটস। জন্ম হয়েছিল ১৯৫৫ সালের ২৮শে অক্টোবর আমেরিকার ওয়াশিংটনের সিয়াটলে। তার বাবা উইলিয়াম হেনরি গেটস সিনিয়র ছিলেন একজন বিখ্যাত আইনজীবী এবং মা ম্যাক্সওয়েল গেট্‌স ছিলেন ইউনাইটেড ওয়ে এর ডিরেক্টর। তার স্কুল জীবন শুরু হয় ১৩ বছর বয়সে লেকসাইড স্কুল থেকে এবং তিনি সেখান থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। এই সময় তিনি মোট ১৬০০ নম্বরের মধ্যে ১৫৯০ নম্বর পেয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। এরই ফলশ্রুতিতে ১৯৭৩ সালে হার্ভার্ড কলেজে পড়ার সুযোগ পেয়ে যান। এখানে পড়তে এসে বিভিন্ন মানুষের সান্নিধ্য লাভ করেন। স্টীভ বালমার তাদেরই একজন যে পরবর্তীতে মাইক্রোসফটের সিইও হন। হার্ভার্ড এ পড়ার সময় গেটস এর নির্দিষ্ট কোন পরিকল্পনা ছিল না শিক্ষাগ্রহন বিষয়ে। কিন্তু তিনি বেশিরভাগ সময় কাটাতেন কলেজের কম্পিউটার ল্যাবে। তিনি পরবর্তীতে ১৯৭৪ এ হানিওওেল নামক একটি ক্লাবে যোগ দেন। সেই বছরই তিনি তার বন্ধু পল এলেন কে সাথে নিয়ে তৈরী করেন এম.আই.টি.এস ‘৪৪০০’ যা ইন্টেল ৮০৮০ সিপিইউতে ব্যবহার উপযোগী। এই আবিষ্কারের পরে গেটস সফটওয়ার কোম্পানী প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন এবং হার্ভার্ড ত্যাগ করেন।

মুলত তার সাফল্যের যাত্রা এখান থেকেই শুরু হয়। পরবর্তী আই.বি.এম ১৯৮০ গেটস কে আই.বি.এম পিসি এর অপারেটিং সিস্টেম তৈরিতে কাজ করতে অনুরোধ করেন। মাইক্রোসফট সর্বপ্রথম তাদের বানিজ্যিক সম্প্রসারন শুরু করে ১৯৮৫ সালের ২০শে নভেম্বর থেকে মাইক্রোসফট উইন্ডোজ এর মাধ্যমে। এই সময়ও তারা আই.বি.এম এর সাথে চুক্তিবদ্ধ ছিল এবং পরবর্তীতে ১৯৯১ এ মাইক্রোসফট কোম্পানি আই.বি.এম থেকে পৃথক হয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করতে শুরু করে। বিল গেটস মাইক্রোসফট এর সিইও ও প্রধান আর্কিটেক্ট ছিলেন।

বিল গেটস ১৯৯৪ সালের ১লা জানুয়ারীতে মেলিন্ডা ফ্রেঞ্চ এর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তিন সন্তানের জনক বিল গেটস বর্তমানে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধনী হিসাবে খ্যাত। বর্তমানে গেটস ৭২.৭ বিলিয়ন ইউ.এস ডলার এর মালিক। তার ৩২তম জন্মদিনের আগেই ফোর্বস ম্যাগাজিনে প্রভাবশালীদের তালিকায় সেরা চারজনের একজন নির্বাচিত হন। এই অর্থের একটি বিশাল অঙ্কের টাকা তিনি প্রতি বছরই বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন এ জমা করেন পৃথিবীর দুস্থ ও অসহায় মানুষের সাহায্যার্থে।

যেকোন প্রত্যাখানকে সাফল্যে পরিণত করুন

বলা হয় আপনি যতবার প্রত্যাখ্যাত হবেন ঠিকই ততটাই সাফল্য লাভ করবেন।

আপনি যদি আগে থেকেই ধরে রাখেন যে অন্যরা আপনাকে প্রত্যাখান করবেন, তাহলে আপনার ভয়ের কারণে আপনি কার্যক্ষমতা হারাবেন। এই ভয়কে প্রথমে জয় করতে হবে এবং তারপর যদি আপনি সফল হতে চান, আপনাকে জেনে নিতে হবে কিভাবে প্রত্যাখানকে আপনি ইতিবাচকভাবে আপনার লক্ষ্য পূরণের হাতিয়ার হিসেবে পরিণত করতে পারেন। আপনাকে যা করতে হবে তা হলঃ

১. কেন আপনি প্রত্যাখ্যাত অনুভব করেন তা বুঝতে হবে

ধরুন আপনি ভালভাবে একজন সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীর কাছে আপনার ব্যবসা তুলে ধরলেন কিন্তু বিনিয়োগকারী বলল, “ঠিক আছে, আমরা আপনাকে পরে জানাব।“ বা খারাপ হলে “আপনার আইডিয়া আমাদের পছন্দ হয়নি, দুঃখিত”। বিনিয়োগটা হাতছাড়া হয়ে যাওয়া অবশ্যই দুঃখজনক। এই অবস্থায় আপনি হতাশ, দুঃখী বা রাগান্বিত হওয়ার পরিবর্তে কেন প্রত্যাখ্যাত অনুভব করবেন? এর কারণ হল আপনি বিনিয়োগকারীর মন্তব্যকে ব্যক্তিগতভাবে নিয়েছেন এবং তাতে মর্মাহত হয়েছেন। প্রত্যাখ্যাত অনুভব করার ৩টি কারণ আছেঃ

যখন এটি প্রায়ই হয়। ধরুন আপনি প্রতিটি বিনিয়োগকারীর কাছ থেকেই নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাচ্ছেন বার বার। আপনি জানেন আপনার আইডিয়াটি ভাল, কিন্তু অন্যদের মতামতের ভিত্তিতে আপনি ধরে নিলেন যে হয়ত আপনারই কোথাও ভুল হচ্ছে।
যখন আপনি আবেগপ্রবণ থাকেন। যখন আপনি মনে-প্রাণে একটি কিছু ধারণ করেন এবং অন্যরা তা গ্রাহ্য করে না, তখন আপনি মনে কষ্ট পান।
যখন আপনি ‘রিজেক্টর’ কে সম্মান দেখান। যখন আপনি অন্য পক্ষকে সম্মান করে থাকেন এবং সে আপনাকে প্রত্যাখান করে দেয়, তখন সেটি আপনার কাছে মেনে নেওয়া কষ্টকর হয়।

২. প্রত্যাখানের তিক্ততা কমিয়ে ফেলুন

আপনার প্রত্যাখ্যাত অনুভব করার কারণগুলো জানলেন, এবার এই কারণগুলোকে দূর করতে হবে যাতে প্রত্যাখানের তিক্ততা আপনি কমিয়ে আনতে পারেন। যদি আপনি বার বার প্রত্যাখ্যাত হয়ে থাকেন তাহলে আপনার মত অন্য যারা আছে তাদের দিকে তাকান এবং ধৈর্য্য ধরুন। যেমন সেলসে যারা কাজ করে তাদেরকে হয়ত একশতেরও বেশি ফোন কল করতে হয় মাত্র একটি পণ্য বিক্রি করার জন্য। যদি আপনি অন্য পক্ষের সাথে আবেগীয়ভাবে যুক্ত থাকেন, তাহলে পরিস্থিতির পরিণাম যাই হোক না কেন সেটার সাথে খুব বেশি সম্পৃক্ত হতে যাবেন না। আপনার পরিচিত কেউ আপনার আইডিয়াতে অর্থায়ন করতে অস্বীকৃতি জানাতে পারে কিন্তু তার সাথে সম্পর্ক ছেঁদ করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না, হতে পারে ভবিষ্যতে এই ব্যক্তিই ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে আপনার কাজের প্রতি আগ্রহ দেখাবে। আর অন্য মানুষটি যদি আপনার শ্রদ্ধার পাত্র হয়ে থাকে তাহলে বাস্তবতার নিরিখে পরিস্থিতিকে বিবেচনা করুন। অন্যদেরকে খুব বেশি সম্মান দেওয়ার কিছু নেই কারণ তারাও আপনার মত মানুষ, কোন দেবতা নন।

৩. অমূলক প্রত্যাখানগুলো দূরে সরিয়ে রাখুন

এবার প্রাসঙ্গিক ও অমূলক আপত্তি আলাদাকরণে বাস্তব-সম্মত যুক্তি প্রয়োগের পালা। প্রাসঙ্গিক আপত্তি হল আপনি যা করতে পারেন সেটা যখন অন্যকে করতে বলেন এবং সে আপনাকে না করে দেয়। অমূলক আপত্তি হল আপনার নিয়ন্ত্রণের বাইরে কোন কিছুর ফলে আপনার সাফল্য বাধাগ্রস্ত হয়েছে। যেমন আপনি একটি সভায় আপনার ক্লায়েন্টকে আমন্ত্রণ জানালেন, কিন্তু আপনি তার নামে ভুল করলেন এবং সে আপনার সভা থেকে উঠে চলে গেল, এটি প্রাসঙ্গিক প্রত্যাখান। আবার আপনি একটি সেলস কল করলেন এবং অপর পক্ষ আপনার কোম্পানিকে কয়েকটি গালি দিয়ে কল কেটে দিল। আপনার সেলস প্রত্যাখ্যাত হয়েছে ঠিকই, কিন্তু অপর পক্ষের দেওয়া গালি কিন্তু আপনার সাথে মোটেও সম্পর্কযুক্ত নয় এবং এটি একটি প্রাসঙ্গিক প্রত্যাখান নয়। তবে ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক প্রত্যাখানের চেয়ে অমূলক প্রত্যাখানের ঘটনা ঘটে বেশি। আর অমূলক প্রত্যাখানের ব্যাপারে আপনার করার মত তেমন কিছুই নেই, তাই ওগুলো নিয়ে চিন্তা না করাই ভাল।

৪. প্রাসঙ্গিক প্রত্যাখানগুলোকে এমনভাবে ব্যবহার করুন যেন তা আপনার সাফল্য নিয়ে আসে

ধরুন আপনি একটি বই প্রকাশ করতে চান, কিন্তু প্রকাশকরা আপনার বইকে প্রত্যাখান করে চিঠি দিল। এভাবে জমতে জমতে অনেকগুলো চিঠি হয়ে গেল। এমতাবস্থায় আপনার মন খারাপ করা উচিত হবে না। আপনি এই প্রত্যাখানের চিঠিগুলো আপনার ঘরের মেঝেতে ফেলে রাখুন এবং প্রতিদিন সকালে উঠে এক এক করে চিঠিগুলোর উপর দিয়ে পার হয়ে যান আর মনে মনে ভাবুন, যত বেশি আপনি প্রত্যাখ্যাত হবেন, অবশেষে ততটাই ভাল অফার আপনি অর্জন করতে পারবেন। এভাবে দেখতে দেখতে হয়ত একটি ভাল প্রকাশক আপনার বই প্রকাশে আগ্রহ দেখাবে এবং আপনার ক্যারিয়ারে নতুন মোড় এনে দিতে পারে। সাফল্যের কোন সহজ পথ নেই, তাই নিজেকে সবসময় মনে করিয়ে দেবেন যে প্রত্যাখান মানেই হল অর্থযোগ ও সম্ভাবনা।

৫. উপযুক্ত বিজনেস দক্ষতা গড়ে তুলুন

প্রত্যাখানের ধরন সম্পর্কে জানলেন, অমূলক প্রত্যাখান ফিল্টার আউট করে দিন আর প্রাসঙ্গিক প্রত্যাখানগুলো নিয়ে ভাবুন যে কী করলেপরিস্থিতির উন্নতি করে আপনি সাফল্য অর্জন করতে পারেন। যদি আপনি বিনিযোগকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম না হন, তাহলে একজন বিশেষজ্ঞ দ্বারা আপনার বিজনেস প্ল্যান পুনরায় পর্যালোচনা করে নিন বা আরো উন্নত বিজনেস মডেল তাতে অন্তর্ভুক্ত করুন। যদি আপনার ফোন কলগুলো একঘেঁয়ে হয়ে যায়, তাহলে আপনার কথা বলার ধরনে পরিবর্তন আনুন।

এই নিয়মগুলো মেনে চললে প্রত্যাখানের ব্যাপারে আপনি আপনার আবেগকে ভালভাবে বশে এনে মর্মাহত হওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবেন এবং প্রাসঙ্গিক প্রত্যাখানগুলো কমিয়ে আনার ব্যাপারে সাফল্য অর্জন করবেন।

সবচেয়ে উদ্ভাবনশীল দেশ সুইজারল্যান্ড

উদ্ভাবন
বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে উদ্ভাবনশীল দেশ সুইজারল্যান্ড। এই তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পঞ্চম। গ্লোবাল ইনোভেশন ইনডেক্স (জিআইআই) প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। গত সোমবার বার্ষিক এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
জিআইআই প্রতিবছর বিশ্বের প্রতিটি দেশের উদ্ভাবনী সক্ষমতার ওপরে একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ প্রতিবেদন তৈরি করে থাকে। এই প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট দেশের অর্থনীতি কতটা শক্তিশালী, সেটা নির্দেশ করে এবং সেই বিবেচনায় দেশটিকে তালিকায় স্থান দেওয়া হয়। এ বছর প্রকাশিত তালিকায় ‘উচ্চ আয়ের অর্থনীতি’ বিভাগে ৪৫টি দেশ রয়েছে।
প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের করনেল ইউনিভার্সিটির জনসন স্কুল, আইএনএসইএডি বিজনেস স্কুল, ওয়ার্ল্ড ইন্টালেকচুয়াল প্রোপার্টি অর্গানাইজেশন।
তালিকায় ১৪২টি দেশের মধ্যে প্রথম পাঁচটি যথাক্রমে সুইজারল্যান্ড, সুইডেন, যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডস ও যুক্তরাষ্ট্র। গত বছর এই তালিকার ১০তম অবস্থানে ছিল যুক্তরাষ্ট্র। সে হিসাবে এ বছর দেশটি পাঁচ ধাপ এগিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পরের অবস্থানে রয়েছে ফিনল্যান্ড। এ ছাড়া হংকং, সিঙ্গাপুর, ডেনমার্ক ও আয়ারল্যান্ড রয়েছে সেরা ১০টি দেশের তালিকায়। মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারত, কাজাখস্তান ও শ্রীলঙ্কার অবস্থান যথাক্রমে ৬৬, ৮৪ ও ৯৮। আর বাংলাদেশের অবস্থান ১৩০।
জিআইআই প্রতিটি দেশকে সাতটি বিষয়ের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করে থাকে। এগুলো হলো প্রতিষ্ঠান, মূলধন ও গবেষণা, অবকাঠামো, বাজার, ব্যবসা-বাণিজ্য, জ্ঞানের পরিধি ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ। এই বিষয়গুলোর মধ্যে কয়েকটির আবার অনেকগুলো উপশ্রেণী রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, মাধ্যমিক স্কুলে শিক্ষার্থী-শিক্ষকের অনুপাত, ১৫ থেকে ৬৯ বছর বয়সী নাগরিকদের উইকিপিডিয়ায় মাসিক সম্পাদন ও ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করার পরিমাণ ইত্যাদি। এই বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট দেশের সক্ষমতা ও দুর্বলতাকে ইঙ্গিত করে। টেকনিউজডেইলি।
বৈশ্বিক উদ্ভাবন সূচক ২০১৩
সূচকের মানদণ্ড: সাতটি বিষয়ের ওপর মূল্যায়ন করা হয়। এগুলো হলো প্রতিষ্ঠান, মূলধন ও গবেষণা, অবকাঠামো, বাজার, ব্যবসা-বাণিজ্য, জ্ঞানের পরিধি ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ।
শীর্ষস্থানীয় দেশ:তালিকায় ১৪২টি দেশের মধ্যে প্রথম পাঁচটি যথাক্রমে সুইজারল্যান্ড, সুইডেন, যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডস ও যুক্তরাষ্ট্র।
মধ্য ও দ. এশিয়া: ভারত, কাজাখস্তান ও শ্রীলঙ্কার অবস্থান যথাক্রমে ৬৬, ৮৪ ও ৯৮। আর বাংলাদেশ ১৩০।

জীবনের সাত শিক্ষা: টনি ব্লেয়ার

টনি ব্লেয়ার
টনি ব্লেয়ারের জন্ম ৬ মে ১৯৫৩। তিনি লেবার পার্টির হয়ে ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০৭ পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। কোলবাই কলেজের ২০১২ সালের সমাবর্তনে তিনি এই বক্তব্য দেন

সভাপ্রধান, সম্মানিত অতিথি, ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ, কোলবাই কলেজে আসতে পারাটা আমার জন্য চমৎকার আনন্দের ও মর্যাদার ব্যাপার।
প্রিয় শিক্ষার্থীরা, আমার জীবন থেকে শেখা সাতটি শিক্ষার কথা তোমাদের বলতে যাচ্ছি। তোমরা ইচ্ছা করলে এই শিক্ষাগুলো গ্রহণ করতে পারো, আবার নাও পারো। এগুলোর মধ্যে প্রথম শিক্ষাটি সরাসরি তোমাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত। কারণ, তোমরা এখনো এই বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা গ্রহণ করছ।

প্রথম শিক্ষা
বাঁচতে হলে শিখতে হবে। কখনো শেখা থামিয়ো না। সফল ব্যক্তিরা কখনো নির্বিঘ্ন খ্যাতি ও সৌভাগ্যের জন্য সফল হন না, বরং তাঁরা সফল হন ভালো কিছু করার অতৃপ্ত আকাঙ্ক্ষা ও অপরিসীম কৌতূহলের জন্য। তাঁরা আত্মোন্নয়নের পথে বিরতিহীন নাবিক। তাই ব্যর্থতার ভয়ে ভীত হয়ো না। ভীত হও চেষ্টাহীন হতে।

দ্বিতীয় শিক্ষা
মুক্তমনা হও। আমি মনে করি, বর্তমান সময়ে মুক্তমনা হওয়াটা ডান ও বাঁয়ের পার্থক্যসূচক বৈশিষ্ট্যের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। আমি পৃথিবীজুড়েই এই পার্থক্যসূচক বৈশিষ্ট্য দেখেছি উদারমনা ও অনুদারমনা ব্যক্তিদের মধ্যে। তাই আমার উপদেশ, বিভিন্ন জাতি, বর্ণ, বিশ্বাস ও সংস্কৃতির ব্যাপারে দিলখোলা হও। কারণ, এই জিনিসগুলোই ইতিহাসের মধ্যে বিভক্তি এনেছে। তবে মুক্তমনা ব্যক্তিরা এসব উতরে যেতে পারে।

তৃতীয় শিক্ষা
ভালো কিছু দিলেই ভালো কিছু পাবে। অন্যের সেবা করার চেয়ে অধিকতর সম্মানজনক আর কিছুই নেই। কারণ, এটিই তোমাকে সবচেয়ে বেশি আত্মতৃপ্তি দেয়। সমব্যথী হতে পারাটাও একটা গুরুত্বপূর্ণ উচ্চাকাঙ্ক্ষা। তাই শুধুই প্রতিষ্ঠিত হতে চেয়ো না, প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পেছনের কারণও খোঁজো। তোমার সামনে বেছে নেওয়ার অনেক কিছুই আছে।

চতুর্থ শিক্ষা
পরিবার, বন্ধুত্ব ও অন্যান্য ব্যাপারে গুরুত্ব দাও। তোমার আত্মীয়-পরিজন ও বন্ধুদের যত্ন নাও, ভালোবাসো। কারণ, পরিবার থেকে তুমি তোমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা গ্রহণ করেছ।

পঞ্চম শিক্ষা
নেতা হও, অনুসারী হয়ো না। সর্বোপরি একজন কেজো মানুষ হও, সমালোচক হয়ো না। মানুষের অগ্রগতি কখনোই বাচাল, অভিযোগকারী কিংবা হতাশাবাদীদের মাধ্যমে নির্মিত হয় না। অগ্রগতি দ্রুতগতিতে এগিয়ে যায় পরিবর্তনকারীদের সাহসের মাধ্যমে। এই সাহস মানে ভয়ের অনুপস্থিতি নয়, বরং ভয়কে জয় করাই সাহস। আমার দেখা প্রায় সব কটি নেতার মধ্যেই একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সন্দেহ, অস্থিরতা, দুশ্চিন্তা ও আত্মবিশ্বাসের চূড়ান্ত অভাব ছিল। কিন্তু তাঁরা সেসব জয় করতে পেরেছেন বলেই নেতা হতে পেরেছেন।

ষষ্ঠ শিক্ষা
আজকের পৃথিবী আগের তুলনায় অনেক বেশি যোগাযোগনির্ভর। এখানে মুগ্ধ করার মতো ও আন্দোলিত করার মতো অনেক কিছুই আছে। সুতরাং, এখনই সময় এই পৃথিবীকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করে দেখার। এই পৃথিবী হাত বাড়িয়ে আছে অনেক রোমাঞ্চ আর সম্ভাবনা নিয়ে। তাই আমি বলব, এই পৃথিবীর সুবিধাগুলো লুফে নাও। দেখো এই বিশ্বকে, দেখো এর সম্ভাবনাগুলোকে।

সপ্তম শিক্ষা
এটা নজিরবিহীন সুযোগের এক অভাবনীয় সময়। এটা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলারও সময়। তবে এই চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ গ্রহণ করতে গিয়ে কেবল মুনাফার দিকটাই ভেবো না। কারণ, জীবনে শুধু মুনাফাই মুখ্য নয়, আমাদের জীবনযাপন নির্ভর করে কিছু মূল্যবোধের ওপর। এই মূল্যবোধগুলো হচ্ছে গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও প্রতিটি ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গের সমতা। অতএব, তোমাদের জন্য আমার পরামর্শ হচ্ছে, আশাবাদী হও। প্রতিটি সকালে ঘুম থেকে জেগে ওঠো একেকটি লক্ষ্য নিয়ে। কারণ, পৃথিবী তোমার কাছে উন্মুক্তই আছে, যদি তুমি তার কাছে নিজেকে মেলে ধরতে পারো।

টায়ার থেকে জুতো

উদ্যোক্তা

ভার্সিটিজীবন শেষ হতে না হতেই যখন লাখ লাখ শিক্ষার্থী বিসিএস গাইড বই মুখস্থ করতে কিংবা নামীদামি বিদেশি কোম্পানিতে চাকরির জন্য আবেদনপত্র লিখতে বসে যান, তখন সবার চেয়ে আলাদা কিছু স্বাধীনচেতা, উদ্যমী তরুণ খুঁজে বেড়ান নতুন প্রকল্পের আইডিয়া। তাঁরা মাস শেষে মোটা অঙ্কের বেতনের স্বপ্ন না দেখে উদ্ভাবনের নেশায় অনেক দিনের জমানো সঞ্চয়ও খরচ করে ফেলেন নির্দ্বিধায়। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের মির্জা জুনায়না সাবাহ, সৈয়দ আজিম হায়দার, সাকিফ নাঈম খান ও অর্থনীতি বিভাগের তাসমিয়া নাহরিন এমনই কয়েকজন উৎসাহী তরুণ উদ্যোক্তা। গত ১৪ মে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস, অস্টিন আয়োজিত ‘ডেল সোশ্যাল ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ ২০১৩’ প্রতিযোগিতার ফাইনালে নিজেদের সামাজিক ব্যবসা পরিকল্পনা উপস্থাপন করে ৪০ হাজার মার্কিন ডলার (প্রায় ৩২ লাখ টাকা) পুরস্কার জিতে এসেছেন তাঁরা।
২০০৭ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস, অস্টিন এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে আসছে। এ বছর মোট তিন লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার মূল্যমানের পুরস্কারের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনলাইনে জমা পড়েছিল মোট দুই হাজার ৬০৫টি প্রজেক্ট। অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ এ প্রতিযোগিতার ফাইনালে জার্মানি, মেক্সিকো, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের দলকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশের দল ‘ফুট সোলজার’ দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে। প্রথম পুরস্কার পেয়েছে সিঙ্গাপুর ও ভারতের একটি যৌথ দল। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, বাংলাদেশের কী এমন পরিকল্পনা, যা হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়কেও হারিয়ে দিল? দেশে ফিরে ‘স্বপ্ন নিয়ে’কে সে গল্পই শোনালেন বিজয়ী তরুণ উদ্যোক্তারা। (অনিবার্য কারণে যুক্তরাষ্ট্র যেতে পারেননি দলের অন্যতম সদস্য আজিম।) আমরা কথা বলি জুনায়না সাবাহ, সাকিফ ও তাসমিয়ার সঙ্গে।
জুনায়না বলেন, ‘গাড়ির বাতিল টায়ার ব্যবহার করে স্বল্প খরচে পরিবেশবান্ধব জুতা তৈরির প্রকল্প হচ্ছে “ফুট সোলজার”। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে সামাজিক কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে গত শীতে আমরা সবাই পঞ্চগড়ে শীতবস্ত্র বিতরণ করতে যাই। সেখানে দরিদ্র মানুষের হাতে গরম কাপড় তুলে দিতে গিয়ে আমরা দেখি, সমস্যা শুধু কাপড়েরই নয়। তীব্র শীতের মধ্যেও তাদের অনেকের পা খালি, ঠান্ডা মাটির ওপর দাঁড়িয়ে আছে তারা। আমরা ভেবে দেখলাম, সত্যিই তো, বাংলাদেশে এমন লাখ লাখ মানুষ শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা খালি পায়ে কাটিয়ে দিচ্ছে, সাধারণ মানের জুতা কেনার সামর্থ্যও তাদের নেই। ফেরার পথে সারাক্ষণ মাথায় ঘুরছিল, শুধু বছরে একবারের জন্য গরম কাপড় বিতরণ করেই কি আমাদের দায়বদ্ধতা শেষ হয়ে যায়? বিষয়টি আমাদের ভীষণভাবে নাড়া দেয়, আর সে ভাবনা থেকেই জন্ম নেয় ফুট সোলজার।’
শুরুটা হয়ে যায় এভাবেই। স্বল্প খরচে কীভাবে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য টেকসই জুতা তৈরি করা যায়, এ নিয়ে পড়াশোনা করতে উঠেপড়ে লেগে যান চার বন্ধু। নানা ভাবনাচিন্তার পর মনে হলো, প্রতিবছর লাখ লাখ গাড়ির টায়ার বাতিল হয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশে সেগুলো নবায়ন করে ব্যবহারযোগ্য পণ্য তৈরি করার কোনো ব্যবস্থা নেই। অসংখ্য টায়ার পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে, এতে শহরের বাতাস মারাত্মক দূষিত হয়ে পড়ছে। কিন্তু একটু চেষ্টা করলেই ফেলে দেওয়া টায়ার হতে পারে রাবারের ভালো উৎস। ব্যস, হয়ে গেল! ‘কম খরচে জুতা তৈরির চেষ্টা আর গাড়ির বাতিল টায়ার—দুয়ে দুয়ে চার মেলাতে দেরি হয়নি আমাদের’, যোগ করলেন তাসমিয়া।
একেই বলে সমস্যা থেকে সুযোগ সৃষ্টি করা। এমন অনেক শিক্ষার্থী আছেন, যাঁরা আইডিয়া নিয়ে কেবল সঠিক সময়ের অপেক্ষায় বসেই থাকেন, কাজ আর শুরু করা হয়ে ওঠে না। ফুট সোলজার দলটির সদস্যরা কিন্তু তেমন নন। মাথায় আইডিয়া আসার পর থেকেই তাঁরা কাজ করতে মাঠে নেমে যান। প্রথমে কয়েকজন মুচির সঙ্গে কথা বলে অল্প কয়েকটি টায়ার থেকে কিছু জুতার নমুনা তৈরি করেন। শুধু নমুনা নয়, মাত্র এক মার্কিন ডলারে কীভাবে মানসম্মত, পরিবেশবান্ধব জুতা তৈরি করা যাবে, তার বিস্তারিত পরিকল্পনা বানিয়ে ফেলেন তাঁরা। কিন্তু সবাইকে তো জানাতে হবে এই উদ্যোগের কথা। বিনা খরচে প্রচার করার জন্য তাঁরা বেছে নেন ফেসবুক। বাতিল টায়ার থেকে বানানো জুতাগুলোর ছবি তুলে ফেসবুকে ‘ফুট সোলজার’-এর ফ্যান পেজ তুলে দেন তাঁরা। অনেকে আগ্রহ প্রকাশ করেন এই উদ্যোগে বিভিন্নভাবে সাহায্য করার জন্য। বিশেষত অনেকেই তাঁদের গাড়ির বাতিল টায়ার তুলে দিতে চান এই তরুণ উদ্যোক্তাদের হাতে।
তবু প্রশ্ন থেকে যায়, এই চমৎকার সামাজিক ব্যবসার উদ্যোগটি কি শুধু ফেসবুকেই সীমাবদ্ধ থাকবে, নাকি বাস্তবেও হাজার হাজার পথশিশু বা দরিদ্র মানুষের পায়ে জুতা পরিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে? ব্যবসা শুরু করে দেওয়ার জন্য ফুট সোলজারের উদ্যোক্তাদের প্রয়োজন ছিল ন্যূনতম ৩০ হাজার মার্কিন ডলার (প্রায় ২৪ লাখ টাকা)। ব্যক্তিগত উদ্যোগে কীভাবে এত টাকা সংগ্রহ করা যাবে বুঝে উঠতে পারছিলেন না কেউই। তবুও হাল ছেড়ে না দিয়ে তাঁরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁদের প্রথম সাফল্য আসে প্রফেশনাল সোসাইটি অব সোশ্যাল বিজনেস ইন বাংলাদেশ আয়োজিত ‘সোশ্যাল বিজনেস প্ল্যান কম্পিটিশন ২০১২’-এ বিজয়ী হওয়ার মাধ্যমে। জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কার জিতে আত্মবিশ্বাস গড়ে ওঠে তাঁদের, চোখ রাখেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ের প্রতিযোগিতাগুলোতে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রকল্প জমা দেন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ডেল সোশ্যাল ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ ২০১৩’ প্রতিযোগিতায়। এর পরের গল্প শুধুই সাফল্যের, বিদেশের মাটিতে দেশের লাল-সবুজ পতাকা ওড়ানোর।
এত বড় পুরস্কার জিতে দায়িত্ব অনেক বেড়ে গেছে বলে মনে করেন দলের সদস্যরা। সাকিফ বলেন, ‘আমাদের যে প্রাথমিক পুঁজির দরকার ছিল, এই প্রতিযোগিতার পুরস্কার জিতে সেটুকু অন্তত নিশ্চিত হয়েছে। এখন আমরা দেশের এনজিওগুলোর সঙ্গে যৌথ কার্যক্রমের মাধ্যমে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চাই। এ ছাড়া যেকোনো ব্যক্তি তাঁর পুরোনো টায়ার আমাদের প্রকল্পে দান করতে পারেন, এ ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য আমাদের ফেসবুক পেজে পাওয়া যাবে http://www.fb.com/footsoldiersbd।
জুনায়না, আজিম, সাকিফ ও তাসমিয়ারা প্রমাণ করে দিয়েছেন, সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ইচ্ছে থাকলে প্রলয়ংকরী বন্যা কিংবা শৈত্যপ্রবাহের জন্য অপেক্ষা করতে হয় না, নিজেদের অবস্থান থেকেই অনেক কিছু করা যায়। নিজেদের অদম্য ইচ্ছা আর পরিশ্রম দিয়ে তাঁরা স্বপ্ন দেখেন সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে সমাজকে বদলে দেওয়ার।

প্রযুক্তি জগতের ‘ভিলেন’

vilen

প্রযুক্তি-বিশ্ব কিছু অসাধারণ বুদ্ধিমান মানুষ পেয়েছে যাঁরা তাঁদের প্রযুক্তি দক্ষতা ও কম্পিউটারের জ্ঞানকে ভালো-মন্দ সব ধরনের কাজেই লাগিয়েছিলেন। অনেক সময় তাঁরা কোনরকম লাভ লোকসানের কথা না ভেবেই মজার মজার সব পণ্য বা সেবা উদ্ভাবন করেছেন। একসময় নিজেদের উদ্ভাবন নিয়ে বিরক্ত হয়ে আবার নতুন কিছু তৈরি শুরু করেছেন। তাঁদের তৈরি উদ্ভাবন কখনও কারও কাছে তাদের বীর বানিয়েছে কারও ডেকে এনেছে ঘোরতর বিপদ। কারও কাছে বীর আবার কারও চোখে ‘ভিলেন’ এমন কয়েকজনকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিজনেস ইনসাইডার।

দস্যু যখন পাইরেট বের প্রতিষ্ঠাতারা
বিটটরেন্ট সাইট হিসেবে পাইরেট বে যেমন খ্যাত, তেমনি কুখ্যাতও বটে। প্রযুক্তি-বিশ্লেষকেরা বলেন, পাইরেট বে যেমন পাইরেটেড কনটেন্টের জন্য সর্বাধিক ভিজিট করা সাইট, তেমনি অনলাইনে সর্বাধিক সেন্সর করা সাইটগুলোর মধ্যেও একটি। অনেক ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি) তাদের সার্ভিস-গ্রহীতাদের এ সাইটটিতে ঢোকার পথ বন্ধ করে রাখে। ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠার পর দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে পাইরেট বে। এ সাইটটি থেকে বৈধ, অবৈধ, কপিরাইট থাকা সব ফাইল পাওয়ার সুবিধা করে দিয়েছিলেন পাইরেট বে-র প্রতিষ্ঠাতা পার গোটিফ্রেড ভার্থল্ম ভার্গ, ফ্রেডরিক নেইজ ও পিটার সনডেন। তবে তাঁদের এই কাজ সবার সুনজর কাড়তে পারেনি। কপিরাইট আইন ভঙ্গ করার অপরাধে সুইডেনের আদালতে দোষী সাব্যস্ত হন তাঁরা।

গুপ্তচর উইকিলিকসের জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ
প্রযুক্তি-বিশ্বে সবচেয়ে সাড়া ফেলেছিলেন উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। অবাধ ও মুক্ত তথ্যের ক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যতম আন্দোলনকারী ভাবা হয় তাঁকে। বিশ্বজুড়ে গোপন তথ্য ফাঁস করার সাড়া জাগানো ওয়েবসাইট উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা তিনি। উইকিলিকস প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে তিনি লাখ লাখ গোপন তথ্য ও সরকারি বার্তা প্রকাশ করে তিনি অনেক দেশের চোখে ‘ভিলেন’ বনে গেছেন। যুক্তরারে চোখে ‘তথ্য সন্ত্রাসী’ বা ‘গুপ্তচর’ আবার কারও কারও কাছে জাতীয় বীর জুলিয়ার অ্যাসাঞ্জ। বিশ্বজুড়ে গোপন তথ্য ফাঁসের ওয়েবসাইট উইকিলিকস-এ তথ্য-বোমা ফাটিয়ে টলিয়ে দিয়েছেন অনেক দেশের শাসনব্যবস্থাও। বর্তমানে যুক্তরাজ্যের ইকুয়েডর দূতাবাসে একরকম বন্দী জীবন যাপন করছেন তিনি। দূতাবাসের বাইরে এলেই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইকুয়েডর সরকার তাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েছে।

মুক্ত তথ্যের হ্যাকার অ্যারন সোয়ার্জ
ইন্টারনেটে অবাধ ও মুক্ত তথ্যের পক্ষে কাজ করেছেন অ্যারন সোয়ার্জ। তথ্য স্বাধীনতার কর্মী আখ্যা পাওয়া অ্যারন সোয়ার্জ আজ বেঁচে নেই। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে নিজের ঘরে ফাঁস লাগানো অবস্থায় তাঁর দেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। প্রযুক্তি-বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়ে গেছে ২৬ বছর বয়সী ‘ইন্টারনেট অ্যাকটিভিস্ট’ অ্যারন সোয়ার্জের এই ‘আত্মহত্যা’। মৃত্যুর সময় এমআইটির ডিজিটাল আর্কাইভ হ্যাক করে বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রতিবেদন ডাউনলোডের অভিযোগে বিচারাধীন ছিলেন সোয়ার্জ। তবে এই অভিযোগ কখনোই স্বীকার করেননি সোয়ার্জ। মাত্র ১২ বছর বয়স থেকেই কম্পিউটারে দক্ষ হয়ে উঠেছিলেন অ্যারন। একটি ওয়েবসাইট প্রতিষ্ঠার জন্য ‘আর্সডিজিটা প্রাইজ’ পেয়েছিলেন। ইন্টারনেটে ব্লগপোস্ট সঞ্চালনের স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা আরএসএস তৈরির কাজে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন ১৪ বছর বয়সে। একই বয়সে যোগ দিয়েছিলেন অধ্যাপক লরেন্স লেসিগের সঙ্গে, তাঁর ‘ক্রিয়েটিভ কমন্স’ নামের ইন্টারনেট সংস্থাটি গড়ে তোলার কাজে। ভীষণ জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগভিত্তিক সংবাদ-সাইট ‘রেডিট’ প্রতিষ্ঠায় হাত লাগিয়েছিলেন তিনি। খুব অল্প বয়সে অনেক টাকা-পয়সা আসে তার হাতে, কিন্তু টাকার জন্য জীবনে তিনি কিছুই করেননি। তাঁর দাবি ছিল, ইন্টারনেটে তথ্য হতে হবে অবাধ। কিন্তু তাঁর উচ্চকণ্ঠ দমাতে তাঁকে মামলায় জড়িয়ে ‘ভিলেন’ বানানো হয়েছিল।

ঘরের শত্রু ব্র্যাডলি ম্যানিং
যুক্তরাষ্ট্রের চোখে তিনি ‘ভিলেন’ আবার অনেকের চোখে বীর ব্র্যাডলি ম্যানিং। উইকিলিকসের কাছে সরকারি নথি পাচার করার অভিযোগে গ্রেপ্তার মার্কিন সেনাসদস্য ব্র্যাডলি ম্যানিংয়ের বিচার চলছে যুক্তরাষ্ট্রে। ২৪ বছর বয়সী ম্যানিং বর্তমানে সামরিক হেফাজতে রয়েছেন। গোপন নথি উইকিলিকসকে সরবরাহের অভিযোগে তাঁকে ইরাক থেকে দুই বছরেরও বেশি সময় আগে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে ১০ টিরও বেশি অভিযোগ আনা হয়েছে। দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে।

‘যুক্তরাষ্ট্রের নতুন বিদ্রোহী’ স্নোডেন
ব্যক্তির মৌলিক স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করে গোপনে নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ করছে যুক্তরাষ্ট্র—এ খবর ফাঁস করেন দেশটির কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ)২৯ বছর বয়সী এক সাবেক কর্মী যার নাম এডওয়ার্ড স্নোডেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তরের ঠিকাদার বুজ অ্যালেন হ্যামিলটনের অধীনে কাজ করতেন তিনি। এডওয়ার্ড স্নোডেন দাবি করেছেন, ‘বিশ্বের সব মানুষের মৌলিক স্বাধীনতার’ স্বার্থে তিনি প্রিজম কর্মসূচির তথ্য ফাঁস করেছেন। এডওয়ার্ড স্নোডেন তথ্য ফাঁসের পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেছেন, ‘আমি এমন কোনো দুনিয়াতে বাঁচতে চাই না, যেখানে আমি যা যা করছি বা যা বলছি সব রেকর্ড করা হচ্ছে। এ ধরনের কোনো ব্যবস্থা আমি সমর্থন করি না এবং এর অধীনে আমি বাঁচতেও চাই না।’
‘দ্য গার্ডিয়ান’কে দেওয়া সাক্ষাত্কারে ২৯ বছর বয়সী স্নোডেন বলেন, ‘আমি কোনো ভুল করিনি।’
স্নোডেনের কর্মকাণ্ডের পর যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা তত্পরতা নিয়ে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান জেমস ক্ল্যাপার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন স্নোডেনের তথ্য ফাঁসের ঘটনায়। তিনি বলেছেন, এমন কাজ ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’। সম্প্রতি স্নোডেনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উঠে পড়ে লেগেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের লাখ লাখ নথি ফাঁস করা উইকিলিকস স্নোডেনকে সমর্থন জানিয়েছে।

রবিনহুড অ্যানোনিমাস গ্রুপ
ইন্টারনেট জগতের ‘রবিনহুড’ হিসেবে খ্যাত অ্যানোনিমাস নামের হ্যাকারদের গ্রুপ। যেকোনো ওয়েবসাইট মুহূর্তে হ্যাক করে ফেলতে দক্ষ এ গ্রুপটি। তবে তাঁদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নির্ভর করে এ ধরনের কর্মযজ্ঞ চালায় তাঁরা। এ দলটি যতটা কুখ্যাতি অর্জন করেছে তেমনি হ্যাকিংয়ের ক্ষেত্রে দক্ষতাও দেখিয়েছে।

বিরক্তিকর পপ অ্যাডের জনক জন শিপল
ইন্টারনেট ব্রাউজারে পপ অ্যাড দেখতে বাধ্য হতে হয়েছে স্রেফ জন শিপলের জন্যই। পপ অ্যাডের জনক ম্যাসাচুসেটসের এ গবেষক। ইন্টারনেটে বিজ্ঞাপনের এক দুয়ার তিনি যেমন খুলেছেন তেমনি অনেকের চোখে তাঁর এই কাজ ‘ভিলেন’-এর কাজের মতোই মনে হয়েছে।

woz

‘পাগল প্রযুক্তিবিদ’ স্টিভ ওজনিয়াক
অ্যাপলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ ওজনিয়াককে ‘প্রযুক্তি গুরু’ হিসেবে জানেন অনেকেই। বর্তমানের প্রযুক্তিপ্রেমী প্রজন্মের যাত্রা শুরু হয়েছিল যাদের হাত ধরে, তাদেরই একজন ওজনিয়াক। স্টিভ ওজনিয়াক এবং স্টিভ জবস ভালো বন্ধু ছিলেন। তারা দুজন ১৯৭৬ সালে বাড়ির গ্যারেজে বর্তমানের জনপ্রিয় অ্যাপল কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। স্টিভ ওজনিয়াককেই অ্যাপলের প্রথম কম্পিউটার তৈরি এবং প্রোগ্রামের জন্য পুরো কৃতিত্ব দেয়া হয়। ১৯৮১ সালে মারাত্মক একটি প্লেন দুর্ঘটনায় স্মৃতিশক্তি হারিয়েছিলেন ওজনিয়াক। ১৯৮৭ সালে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে অ্যাপল ছেড়ে দেন এবং বিভিন্ন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে কাজ শুরু করেন। বিখ্যাত অনেক প্রতিষ্ঠানের যন্ত্রাংশের ত্রুটি বের করে তিনি তাঁদের চোখে ‘ভিলেন’ বনে গেছেন। আবার সময় সময় তিনি এমন সব যন্ত্র তৈরি করেন যা দিয়ে মানুষকে বিরক্ত করতে যথেষ্ট। তাঁর বিশেষ আগ্রহ হচ্ছে নতুন মুঠোফোন বাজারে এলে প্রথম মুঠোফোনটি সংগ্রহ করা। তিনি সঙ্গে সব সময় একগুচ্ছ ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি নিয়ে ঘোরেন। মজার ব্যাপার হল প্রযুক্তি-পাগল স্টিভ ওজনিয়াকের বাড়িতে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ নেই।

কোনকিছুতে আটকে আছেন? এগিয়ে যাওয়ার উপায়

আপনার কী মনে হয় যে আপনি স্থবির হয়ে পড়েছেন বা আপনার সীমায় পৌঁছে গেছেন? এখানে সব বৃত্ত ভেঙ্গে সামনে এগিয়ে যাওয়ার তিনটি পন্থা তুলে ধরা হল।

আপনি ধরে নিয়েছেন যে আপনি ভালভাবেই এগিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু সবকিছুই এক সময় হুট করেই স্থবির হয়ে পড়ে। আগে যা কার্যকর ছিল বর্তমানে তা আর হয়ত কার্যকর নেই। তাই আপনি আরো বেশি পরিশ্রম করছেন কিন্তু তারপরও কাজের কাজ তেমন কিছুই হচ্ছে না।

ঘাবড়াবেন না, কোনকিছু অর্জন করার পথ কিন্তু মসৃণ হয় না। হতে পারে আপনি আপনার কোম্পানিকে পরবর্তী ধাপের জন্য পরিবর্ধন করতে চাইছেন, মার্কেটিংয়ে নতুন গতি আনতে চাইছেন বা কর্পোরেট মানদন্ডে উন্নীত হতে চাইছেন, সবকিছুর মাঝেই সমস্যা থাকেবেই। এগুলো বিরক্তিকরও বটে, তবে এগুলো আপনার কোম্পানির বৃদ্ধির প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত। হতাশ হওয়ার কিছু নেই। যখন আপনি নিজেই সব বাধা অতিক্রম করে সাফল্যের পথ তৈরি করে নিতে পারেন, তখন অজানা শক্তির কাছে কেন নতি স্বীকার করবেন? আপনাকে সাহায্য করার জন্য এখানে তিনটি কৌশল তুলে ধরা হল।

১. নিজের দুর্বলতাকে ভালভাবে পরখ করুন

অনেককেই শুরু থেকে তাদের নিজস্ব শক্তির উপর জোর দিতে বলা হয়। আপনার অভিজ্ঞতা ও বর্তমান প্রতিভা ব্যবহার করে ফেলেছেন বলে হয়ত আপনার মাঝে স্থবিরতা চলে এসেছে, এখন দেখতে হবে আপনার দক্ষতার ক্ষেত্রে কোন জিনিসটি বাদ গেছে। আপনি যে কাজগুলো ভালভাবে করছেন না তার একটি তালিকা করুন। এক এক করে সবগুলোর দিকে নজর দিন, এবং প্রতিটি দুর্বলতা দূর করার জন্য যে তিনটি জিনিস আপনি করতে পারেন তা লিখে রাখুন। প্রতিটি দুর্বলতা কাটিয়ে উঠার জন্য একটি সময় সীমা ঠিক করে নিন।

২. সমালোচকদের দ্বারস্থ হোন

এখন কিন্তু অনুপ্রারণা খোঁজার সময় নয়। আপনার ইগোকে কিছু সময়ের জন্য দূরে সরিয়ে রাখুন। যদি আপনার কাছে সব উত্তর থাকত তাহলে হয়ত এতক্ষণে আপনি সব বাধা দূর করতে পারতেন। আপনার দরকার অন্যদের সহায়তা। আপনার পরিচিত যারা স্পষ্ট ও সত্যবাদী তাদের দ্বারস্থ হোন। তাদেরকে বলুন আপনার কাজ ও চিন্তাধারাকে প্রশ্ন ও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করার জন্য। নিজের পন্থার সাফাই গাওয়া থেকে বিরত থাকুন। মনকে খোলা রাখুন এবং নতুন কিছু শেখার মানসিকতা তৈরি করে নিন। হয়ত এতে কষ্ট হবে আপনার তবে অহেতুক চিন্তা ও বিভিন্ন অকার্যকর প্রক্রিয়া – যার ফলে আপনার সামনে এগিয়ে যাওয়া ব্যাহত হচ্ছে, তা এর মাধ্যমে আপনি কাটিয়ে উঠতে পারবেন।

৩. নিরপেক্ষ পন্থা অবলম্বন করুন

আপনি যখন আপনার কোম্পানির অগ্রগতি নিয়ে অখুশি, তখন নতুন উদ্যোগ গ্রহণের কথা চিন্তা করতে হবে। গতকাল যে ব্যর্থতা ছিল তা যেন আজকে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ধরুন কোম্পানিকে নতুন এক বিনিয়োগকারী কিনে নিয়েছে, আপনাকে সেই বিনিয়োগকারীর দৃষ্টিভঙ্গি থেকে চিন্তা করতে হবে। পুরনো দেন দরবার বাদ দিয়ে নতুন করে কোম্পানির সব কিছু মূল্যায়ন করে দেখতে হবে। পূর্বে যে সাফল্য অর্জিত হয়নি তা অর্জনের পথ অবিষ্কার করতে হবে। আপনার নতুন করে সময় ও শ্রম দেওয়া অর্থবহ করতে সাফল্যের উত্তম পথ খুঁজে নিতে হবে।

আপনি যত বেশি অর্জন চাইবেন, তত বেশি বাধার সম্মুখীন হতে হবে আপনাকে। চ্যালেঞ্জগুলো বড় হয়ে দেখা দেবে আর তখন শুধু কঠোর পরিশ্রম আর অধ্যবসায় এগিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ঠ হবে না। সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে সবাই কিন্তু টিকে থাকতে পারে না এবং এর পেছনে কারণও আছে। সততা ও নিষ্ঠার সাথে বাধা দূর করার ইচ্ছা ও সক্ষমতাই কিন্তু আপনার সামনে এগিয়ে যাওয়া নিশ্চিত করবে।